এবিএনএ: ইউক্রেন ইস্যুকে কেন্দ্র করে পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার উত্তেজনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। কারণ এরই মধ্যে রুশ হুমকি উপেক্ষা করে ন্যাটোতে যোগ দিতে আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন। ফিনল্যান্ডের সংসদ ভোটের মাধ্যমে এ ব্যাপারে নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়েছে। সুইডেনের সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতারাও আবেদনটির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।
দেশ দুইটির আবেদনে পর ন্যাটোতে যোগ দেওয়া প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তার জন্য কতদিন লাগবে বা কোন কোন ধাপ অতিক্রম করতে হবে সে বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে ন্যাটোর একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বার্লিনে বৈঠকের পর জানিয়েছেন, খুব দ্রুতই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জানা গেছে, ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিক করা নেই, পরিস্থিতির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তবে প্রথম ধাপ হচ্ছে একটি রাষ্ট্রকে অবশ্যই ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করতে হবে। তারপর ন্যাটো এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করবে।
এরপর সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে জোটের ১৯৯৫ সালের ‘স্টাডি অন এনলার্জমেন্টের’ নির্ধারিত মানদণ্ড পূরণ করতে হবে। ন্যাটো জানিয়েছে, এ প্রক্রিয়াটির মধ্যে রয়েছে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা, বাজার অর্থনীতি, সংখ্যালঘুদের সমান সুযোগ-সুবিধা, শান্তিপূর্ণভাবে সংঘাত মোকাবিলা ও ন্যাটোর সামরিক কার্যক্রমে অবদান রাখার সক্ষমতা ও ইচ্ছা থাকতে হবে।
ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সহকারী অধ্যাপক আলেকজান্ডার ল্যানোসজকার বলেন, ফিনল্যান্ড ও সুইডেন দীর্ঘদিন ধরে ন্যাটোতে থাকার মৌলিক প্রয়োজনীয়তা পূরণ করেছে। এ কারণে দেশ দুইটির ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ হতে পারে বলেও জানান তিনি।
অ্যাবেরেস্টউইথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোপীয় নিরাপত্তার সিনিয়র লেকচারার অ্যালিস্টার শেফার্ড বলেন, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের জন্য সদস্যপদ তুলনামূলকভাবে সহজ হবে। তিনি বলেন, দেশ দুইটি রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করেছে। উভয় দেশেরই গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও সামরিক সক্ষমতা প্রশংসনীয় অর্থাৎ ন্যাটোর মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। ন্যাটোর বাজেটে অবদান রাখার সম্পদ দেশ দুইটির রয়েছে। ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটোর গুরুত্ব ও নিরাপত্তা বাড়বে, কমাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাই আনুষ্ঠানিক যোগদানের আলোচনা শুরু করতে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে ন্যাটো দ্বারা আমন্ত্রণ জানাতে হবে। পাশাপাশি ন্যাটোর দেশগুলোর উচিত দেশ দুইটির পক্ষে ভোট দেওয়া।
শেফার্ড বলেন, প্রাথমিকভাবে হাঙ্গেরি ও তুরস্ক কিছু অসন্তোষ বা আপত্তি জানাবে কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দেশ দুইটির সদস্যপদ গ্রহণ করবে। এদিকে ন্যাটোর সদস্য পদের আবেদন গ্রহণ করার পর ব্রাসেলসে আলোচনা শুরু হয়েছে। এর আগে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের সঙ্গে বৈঠক হয়। এরপর ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা পূরণে তারা রাজি এ মর্মে একটি চিঠি পাঠানো হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চাহিদা পূরণে প্রার্থীদের একটি সময়সীমা ঘোষণা করতে হয়। এরপর ন্যাটো প্রটোকল অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ন্যাটোর সবশেষ সদস্য উত্তর মেসিডোনিয়া। ২০১৮ সালের জুনে তারা আমন্ত্রণ পেলেও আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোর সদস্যপদ পায় ২০২০ সালের ২৭ মার্চ অর্থাৎ প্রায় দুই বছর পর। কিন্তু ন্যাটোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন নর্ডিক দেশ দুইটির সদস্যপদ পেতে কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে। এদিকে ন্যাটোর মহাপরিচালক স্টলটেনবার্গ বলেছেন, খুব দ্রুতই প্রক্রিয়া শেষ করা হবে।